প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে কারাবন্দিদের জন্য বিশেষ খাবারের পাশাপাশি নতুন পোশাক দেয়া হয়েছে। সরবরাহ করা হয়েছে উন্নত মানের খাবার।
ঈদ উপহার হিসেবে নারী বন্দিদের দেয়া হয়েছে নতুন শাড়ি, আলতা, মেহেদী, কপালের টিপ, চুলের ফিতাসহ আরও অনেক কিছু। নারী বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের দেয়া হয়েছে নতুন জামা। পুরুষ বন্দিদের দেয়া হয়েছে লুঙ্গি।
কারা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিটি কারাগারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে এসব উপহার। এর বাইরে উন্নত মানের খাবার সরবরাহে বন্দিদের জন্য অতিরিক্ত অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদ উপলক্ষে কারাবন্দিদের উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রত্যেক বন্দির জন্য ১৫০ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হয়েছে।’
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে শিশুদের নতুন জামা সরবরাহ করা হয়েছে। নারীদের দেয়া হয়েছে আলতা, টিপ, চুলের ব্যান্ড, রঙ ফর্সকারী ক্রিম ও মেহেদি।
পরিবেশন করা হয় উন্নতমানের খাবার। এর মধ্যে সকালে পরিবেশন করা হয় পায়েস, মুড়ি। দুপুরে দেয়া হয় ভাত, আলুর দম। আর রাতের খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে পোলাও, গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট, যারা গরুর মাংস। যারা গরুর মাংস খান না তাদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে খাসির মাংস। সঙ্গে রয়েছে মিষ্টি, কোক ও পান সুপাড়ি।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ নিউজবাংলা বলেন, ‘আমি যে কারাগারের দায়িত্ব পালন করেছি সেখানেই কারাবন্দি নারী ও শিশুদের নতুন ঈদ উপহার দিয়েছি। এবারও কারাবন্দি যেসব নারীর সঙ্গে তাদের ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে তাদের জন্য নতুন পোশাক দেয়া হয়েছে। নারীদের রঙ ফর্সাকারী ক্রিম থেকে শুরু করে পায়ের আলতা, চুলের ফিতা, ব্যান্ড, কপালের টিপ সরবরাহ করা হয়েছে।’
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট আড়াই হাজার কয়েদির মধ্যে নারী রয়েছেন ১০৯ জন।
কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের বর্তমানে ৯ হাজার বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে কোনো নারী বা শিশু নেই বলে জানালেন সেখানকার সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ।
কয়েদিদের মাঝে ঈদ উপলক্ষে উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে জানিয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সকালে দেয়া হয়েছে মুড়ি পায়েস। দুপুরে ভাত, রুই মাছ ও আলুর দম। আর রাতের দেয়া হয়েছে বিকেলেই। রাতের মেন্যুতে আছে পোলাউ, গুরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির রোস্ট, সফট ড্রিংকস, পান সুপারি।’
সুভাষ কুমার জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সরাসরি সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। তবে সপ্তাহে একদিন মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন তারা। ঈদের দিন বন্দিদেরকে তাদের স্বজনদের সঙ্গে সর্বোচ্চ তিন মিনিট করে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষ খাবারের পাশাপাশি আমরা দরিদ্র পুরুষ বন্দিদের লুঙ্গি, নারীদের শাড়ি, শিশুদের নতুন জামাকাপড় দিয়েছি। এ ছাড়া, নারী বন্দিদের কসমেটিক্স পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ৭ জনের কারামুক্তি
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার সাতজন কয়েদিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের স্টাফ অফিসার ও ডেপুটি জেলার জাকির হাসান রিয়াল নিউজবাংলাকে বলেন, ঈদের আগে রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাধারণ ক্ষমার আওতায় এবার ৭ জন পুরুষ কারাবন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে ফরিদপুর কারাগার থেকে তিনজন, ময়মনসিংহ কারাগার থেকে দুজন ও লক্ষীপুর কারাগার থেকে দুজন বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়।
কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭৫ হাজার বন্দি রয়েছেন।
ঈদ উপলক্ষে প্রত্যেক কারাগারে একই অঙ্কের আর্থিক বরাদ্দ থাকলেও সংশ্লিষ্ট জেলার কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সুবিধা অনুযায়ী খাবার মেন্যু ও পোশাক- পরিচ্ছদ সরবরাহ করেছে।